Thursday, April 25, 2013

যে জীবন পিঁপড়ের……….


জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখছি, প্রতিবছরই দেখছি, বারবার দেখছি। ভবন ধসে, আগুনে পুড়ে গার্মেন্টস্ কর্মীর মৃতু্য। এতোদিনে তো এসব দেখে দেখে অভস্ত হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু আমি দূর্বল চিত্তের মানুষ বলেই হয়তো এখনো এসব দেখে কেঁপে উঠি, ঘুমের ঘোরে দুঃস্বপ্ন দেখি। সবল চিত্তের মানুষেরা এগুলোকে system loss বলে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবে, আর তারপর বলবে এদেশে garments শিল্পের ব্যপক সফলতার কথা, garments এর উপর এ দেশের অর্থনীতির ব্যপক নির্ভরতার কথা। আমরা অবাক হয়ে তাদের কথ শুনবো। আচ্ছা এ দেশে garments শিল্প এত বিস্তার লাভ করলো কেন? কেউ হয়তো বলবে এ দেশের স্বল্প শ্রম মুজুরি, স্বল্প উৎপাদন খরচের কথা। কিন্তু তাহলে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম এসব দেশে কেন এ শিল্প এত বিস্তার লাভ করলো না। ঐসব 'স্বল্প' বিষয়—আশয় হয়তো কোন ব্যপার হতে পারে, কিন্তু মূল কারণ নয়। Garments এর কাপড়ের সুতা, wool ইত্যাদি fiber জাতীয় সূক্ষাতিসূক্ষ (যেগুলো কিনা চোখেও দেখা যায় না) জিনিসগুলো একজন মানুষের মুখ, নাক, কান দিয়ে শরীরের ভিতর প্রবেশ করে তার কার্যক্ষমতা ১৫-২০ বছর পর্যন্ত কমিয়ে দেয়, আর তারপর তার মৃতু্য আসে cancer বা অনান্য মরণব্যাধীর মধ্য দিয়ে। একারণেই হয়তো এ দেশে চল্লিশোর্ধ্ব garment কর্মী খুব বেশী দেখা যায় না। একজন সাদা চামড়রার অকাল মৃতু্য অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই হয়তো এ দেশে ব্যঙের ছাতার মতো যত্রতত্র garment কারখানা গড়ে উঠেছে।

আমিই বা এতো কথা বলছি কেন? ওরা কি মানুষ নাকি যে ওদের মৃতু্যতে আমরা এতো অস্থির হবো, উত্তেজিত হবো। ওরা মানুষ হলে নিশ্চয়ই ঐসব garments কারখানার মালিকপক্ষ ওদেরকে জ্বলন্ত দালানে কতিপয় সম্পত্তি বাঁচানোর জন্য তালাবদ্ধ করতো না কিংবা ফাটল ধরা ভবনে জোর করে কাজে পাঠাতো না। গরীব দেশে গরীব হয়ে জন্মানোর  প্রায়শ্চিত্ত তো ওদের করতেই হবে। ঐসব বাড়ী-গাড়ীওলা শিক্ষিত মালিকদের মনুষ্যত্ব হয়তো অনেক আগেই মারা গেছে, কিন্তু টাকা থাকলে এসব নিশ্চয়ই কোন সমস্যা না। আর তাইতো এতো এতো দূর্ঘটনার কোন বিচার হয় না, সবাই আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে যায়। আর তারপর আমাদের সাথে এসির ভিতর বসে উন্নয়ন আর পরিবর্তনের গান গায়। পুঁজিবাদী আমাদের এই সমাজে অর্থ উপার্জনই তো আসল কথা, তা সে যেভাবেই হোক না কেন। আরে আমাদের শিক্ষাই তো আমাদের শিখায় যে টাকা কামানোই সবকিছু। ঔ যে ছোটবেলায় আমরা বর্ণশিক্ষা বইয়ে শিখেছিলাম- লেখাপড়া করে যে গাড়ীঘোড়া চলে সে। সুতরাং ঐসব মনুষ্যত্বের বুলি হচ্ছে অলসের বিলাসিতা। বাস্তব পৃথিবীতে এসবের কোন ভিত্তি নেই। মানুষ আসবে, আগুনে পুড়বে, ভবন ধসে মরবে, তারপর আবার নতুন কেউ আসবে মারা যাওয়ার জন্য।


জানি এসব দৃশ্য আরো দেখতে হবে। ওরা মারা যাবে আর বুধবারের ঘটনার মতো মালিকপক্ষ পুলিশের চোখের সামনে থেকে উধাও হয়ে যাবে। আর তারপর কয়েকদিন পত্রিকা, TV তে এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হবে। তারপর মে দিবসে টিভির studio কিংবা পাড়ার মাঠে শ্রমজীবি মানুষের স্তুতি বর্ণনা করে concert হবে। কিন্তু যা চলার তা চলতেই থাকবে

"How many deaths will it take till he knows
That too many people have died ?
The answer my friend is blowin' in the wind."
--Bob Dylan

No comments:

Post a Comment